ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পুলিশের গুলিতে কিশোর নিহত হওয়ার জেরে চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ৪২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশের বয়স ১৪ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ২৪২ জন প্যারিসের। বাকিদের দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খবর- বিবিসি

বৃহস্পতিবার ছিল বিক্ষোভের তৃতীয় দিন। এদিন বিকেলে কিশোরের মায়ের নেতৃত্বে একটি মিছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তৃতীয় রাতে লিলি ও মার্সেইতে বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয় ৪০ হাজার পুলিশ।

গত রাতে সর্বশেষ দফা গোলযোগের সময় প্যারিসে বহু দোকানপাট লুট হয়, অনেক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। যেভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন, তাতে ডানপন্থী এবং কট্টর ডানপন্থী দলগুলো জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য চাপ দিচ্ছে।

শুক্রবার (৩০ জুন) দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ তার মন্ত্রিসভার যে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন সেটি সংকট মোকাবেলায় গত কয়েকদিনের মধ্যে দ্বিতীয় বৈঠক।

ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারি করলে কর্তৃপক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ ক্ষমতা পায়। এই ক্ষমতাবলে সরকার কারফিউ জারি করতে পারে এবং সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করতে পারে। তবে জরুরি অবস্থা তখনই জারি করা হয়, যখন দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কোনো হুমকি তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হয়।

franceতৃতীয় রাতের দাঙ্গার পর প্যারিস এবং অন্যান্য শহরে যে ধরণের ধ্বংসের চিত্র দেখা গেছে, তারপর জরুরি অবস্থা জারির জন্য দাবি আরও জোরালো হবে।

এমন বিক্ষোভ দমনের জন্য ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাকের সময়কালে ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। এরপর ২০১৫ সালে প্যারিসে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরও ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং সেটি দু’বছর জারি ছিল।

এর আগে, গত মঙ্গলবার (২৭ জুন) আলজেরীয় এবং মরোক্কান বংশোদ্ভূত ১৭ বছর বয়সী তরুণ নাহেল এম গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

যে পুলিশ অফিসারের গুলিতে নাহেল মারা যান, তিনি তার পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছেকৃতভাবে খুনের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

ফ্রান্সে নাহেলের মৃত্যুতে বর্ণবাদ এবং সংখ্যালঘু জাতি-গোষ্ঠীর প্রতি পুলিশের বৈষম্যমূলক আচরণের ব্যাপারে ক্ষোভ উস্কে দিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পুরো ফ্রান্স সহিংস বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। প্যারিসে কড়া পুলিশ পাহারা সত্ত্বেও বহু দোকানপাট লুট হয়েছে। রাস্তায় অনেক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।

franceগতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) নাহেলের মায়ের নেতৃত্বে যে শোক মিছিল বেরিয়েছিল, সেখানেও পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের সংঘর্ষ হয়। ওই দিন স্থানীয় সময় রাত ৯টার পর প্যারিস এবং বৃহত্তর অঞ্চলে সব বাস এবং ট্রাম চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। প্যারিসের কোনো কোনো উপশহরে কারফিউ জারি করা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন বলেছেন, ১৭ বছর বয়সী নাহেলের মৃত্যুতে যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে তা তিনি বুঝতে পারেন। তবে এই সহিংসতা কোন যুক্তিতেই মানা যায় না।

নাহেলের মৃত্যুর পর ফ্রান্সে পুলিশের ক্ষমতা এবং প্যারিসের উপশহরগুলোর মানুষের সঙ্গে এই বাহিনীর সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। উপশহরগুলোতে যারা থাকেন, তারা অর্থনৈতিক বঞ্চনা এবং বৈষম্যের শিকার বলে মনে করেন।